Skip to main content

বারিমণ্ডল

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

1 . পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী ?
উত্তরঃ প্রশান্ত মহাসাগর ।
2 . পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী ?
উত্তরঃ আটলান্টিক মহাসাগর ।
3 . ভূ - পৃষ্ঠের শতকরা কত ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে ?
উত্তরঃ ৭০ ভাগ ।
4 . আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখ ।
উত্তরঃ উপসাগরীয় স্রোত ও ব্রেজিল স্রোত ।
5 . আটলান্টিক মহাসাগরের কোন অংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয় ।
6 . সমুদ্রস্রোত বলতে কী বােঝ ?
উত্তরঃ সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয় । সমুদ্র জলরাশির এই প্রবাহকেই বলে সমুদ্রস্রোত ।
7 . শৈবাল সাগর কী ?
উত্তরঃ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত , উপসাগরীয় স্রোত , ক্যানারী স্রোত প্রভৃতি মিলে একটি জলাবর্তের সৃষ্টি করে যার মধ্যভাগ স্রোতবিহীন । ফলে মধ্যভাগে নানারকম আগাছা , শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । এইজন্য এই অংশের নাম শৈবাল সাগর ।
8 . ব্রেজিল স্রোত কাকে বলে ?
উত্তরঃ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বাংশে ব্রেজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর যে উষ্ণ স্রোতটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয় তাকে ব্রেজিল স্রোত বলে ।
9 . বেঙ্গুয়েলা স্রোত কাকে বলে ?
উত্তরঃ এটি আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ - পূর্ব প্রান্তের একটি শীতল স্রোত দক্ষিণ মহাসাগর থেকে শীতল কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তরদিকে প্রবাহিত হয় । এরই নাম বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।
10 . হিমপ্রাচীর কী ?
উত্তরঃ উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে দক্ষিণমুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রায় সবুজ জল এবং উত্তরমুখী উষ্ণ মহাসাগরীয় স্রোতের ঘন নীল জলের মাঝখানে যে বিভাজন রেখা দেখা যায় তাকে হিমপ্রাচীর বলে ।
11 . হিমশৈল কাকে বলে ?
উত্তরঃ সমুদ্রে ভাসমান বিশাল আকৃতির বরফের স্থূপকে বলে হিমশৈল ।
12 . আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কী ?
উত্তরঃ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় মধ্যাংশে পশ্চিমমুখী উত্তর ও দক্ষিন নিরক্ষীয় স্রোত দুটির ঠিক মাঝখানে একটি স্রোত বিপরীত মুখে অর্থাৎ পূর্বদিকে প্রবাহিত হয় একে বলে আটলান্টিকের নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত ।
13 . কুরেশিয়ে স্রোত বা জাপান স্রোত কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশে বিশেষত জাপানের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত উষ্ণ স্রোতের নাম কুরেশিয়াে স্রোত বা জাপান স্রোত ।
14 . জাপান উপকূল কোন স্রোতের প্রভাবে উষ্ণ থাকে ?
উত্তরঃ কুরেশিয়ে স্রোত বা জাপান স্রোতের প্রভাবে ।
15 . বেরিং স্রোত কাকে বলে ?
উত্তরঃ উত্তরের সুমেরু মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত মেরুবায়ুর প্রভাবে বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করে একেই বলে বেরিং স্রোত ।
16 . মালাগাসি দ্বীপের পূর্ব উপকূল দিয়ে প্রবাহিত স্রোতটির নাম কী ?
উত্তরঃ মালাগাসি স্রোত ।
17 . হিমপ্রাচীর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তরঃ আটলান্টিক মহাসাগরে ।
18 . কী কী কারণে জোয়ার - ভাটা হয় ?
উত্তরঃ পৃথিবীর আবর্তন গতিএবং পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণজনিত বলের কারণে ।
19 . চান্দ্র জোয়ার কাকে বলে ?
উত্তরঃ চন্দ্রের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় | তাকে চান্দ্র জোয়ার বলে ।
20 . সৌর জোয়ার কাকে বলে ?
উত্তরঃ সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় রাকে সৌর জোয়ার বলে ।
21 . কোন স্থানে একটি জোয়ার ও একটি ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে ?
উত্তরঃ ৬ ঘণ্টা ১ মিনিট ।
22 . কোন স্থানে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে ?
উত্তরঃ ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ।
23 . পৃথিবীর একটি স্থানে দিনে কত বার জোয়ার - ভাটা হয় ?
উত্তরঃ দু - বার জোয়ার ও দু - বার ভাটা হয় ।
26 . কোন স্থানে যখন মুখ্য জোয়ার হয় , তার প্রতিপাদ স্থানে তখন কী অবস্থা বিরাজ করে ?
উত্তরঃ গৌণ জোয়ার ।
25 . কোন স্থানে দু - বার মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে ?
উত্তরঃ ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট ।
26 . প্রত্যহ কতবার জোয়ার ভাটা হয় ?
উত্তরঃ প্রত্যহ দু - বার জোয়ার ভাটা ও দু - বার ভাটা হয় ।
27 . ভরা কোটাল কোন দিনে হয় ?
উত্তরঃ অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে ।
28 . দুই মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত ?
উত্তরঃ ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট ।
29 . জোয়ার - ভাটা খেলে এমন একটি নদীর নাম কর ।
উত্তরঃ হুগলী নদী ।
30 . একটি স্বাদু জলের হ্রদের নাম লেখ ।
উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সুপিরিয়র ।
31 . ভারতের একটি সুপেয় জলের হ্রদের নাম লেখ ।
উত্তরঃ ডাল হ্রদ ।
32 . একটি লবনাক্ত জলের হ্রদের নাম লেখ ।
উত্তরঃ জর্ডন - ইস্রায়েল সীমান্তের মরুসাগর ।
33 . চিল্কা কী জাতীয় হ্রদ ?
উত্তরঃ লবণাক্ত জলের হ্রদ ।
34 . পৃথিবীর বৃহত্তম হ্রদের নাম কী ?
উত্তরঃ কাস্পিয়ান ।
35 . পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের হ্রদের নাম কী ?
উত্তরঃ আমেরিকার সুপিরিয়র ।
36 . পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা লবণাক্ত হ্রদ কোনটি ?
উত্তরঃ জর্ডন - ইস্রায়েল সীমান্তের মরুসাগর ।
37 . পৃথিবীর গভীরতম হ্রদের নাম কী ?
উত্তরঃ রাশিয়ার বৈকাল ।
38 . পৃথিবীর সর্বোচ্চ হ্রদের নাম কী ?
উত্তরঃ দক্ষিণ আমেরিকার টিটিকাকা ।
39 . পৃথিবীর নিম্নতম হ্রদ কোনটি ?
উত্তরঃ জর্ডন - ইস্রায়েল সীমান্তের মরুসাগর ।
40 . হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে কোন হ্রদ সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ করি হ্রদ ।
41 . ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি উপহ্রদের নাম কর ।
উত্তরঃ চিল্কা , পুলিকট ।
42 . একটি উপহ্রদের নাম লেখ ।
উত্তরঃ চিল্কা ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:-

প্রশ্ন:- পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর কোনটি ?
উত্তর:- পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগরের নাম হল প্রশান্ত মহাসাগর ।

প্রশ্ন:- বেঙ্গুয়েলা স্রোত কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর:- বেঙ্গুয়েলা স্রোত দেখা যায় আটলান্টিক মহাসাগরে ।

প্রশ্ন:- হিমপ্রাচীর কোথায় দেখা যায় ?
উত্তর:- হিমপ্রাচীর দেখা যায় আটলান্টিক মহাসাগরে ।

প্রশ্ন:- চাঁদের একবার পৃথিবী পরিক্রমণ করতে কত সময় লাগে ?
উত্তর:- চাঁদের একবার পৃথিবী পরিক্রমণ করতে ২৭১/২ দিন সময় লাগে ।

প্রশ্ন:- ভূপৃষ্ঠের জলভাগের প্রতিটি স্থানে ২৪ ঘন্টায় ক-বার জোয়ার ও ক-বার ভাটা হয়  ?
উত্তর:- ভূপৃষ্ঠের জলভাগের প্রতিটি স্থানে ২৪ ঘন্টায় দু-বারজোয়ার ও দু-বার ভাটা হয় ।

প্রশ্ন:- মরা কোটাল কখন দেখা যায় ?
উত্তর:- যখন চন্দ্র ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে তখন মরা কোটাল দেখা যায় ।

প্রশ্ন:- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ কি  ?
উত্তর:- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ ।

প্রশ্ন:- ভরা কোটাল কোথায় হয় ?
উত্তর:- অমাবস্যার দিনে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের সামনে আসে সেখানে ভরা কোটাল কোথায় হয় ।

প্রশ্ন:- ভারত মহাসাগরীয় স্রোত কোন বায়ুপ্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়  ?
উত্তর:- ভারত মহাসাগরীয় স্রোত সাময়িক বায়ুপ্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।

প্রশ্ন:- কোন স্রোতের প্রভাবে জাপান উপকূল উষ্ণ থাকে  ?
উত্তর:- উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপান উপকূল উষ্ণ থাকে ।

প্রশ্ন:- মগ্নচড়ার সৃষ্টি কোথায় হয় ?
উত্তর:- শীতল ও উষ্ণ স্রোতের মিলনস্থলে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয় ।

প্রশ্ন:- গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক অঞ্চলটি কিসের জন্য বিখ্যাত  ?
উত্তর:- গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক অঞ্চলটি বাণিজ্যিক মত্স্য চাষের জন্য বিখ্যাত ।

প্রশ্ন:- জোয়ারভাটা খেলে এমন একটি নদীর নাম কি ?
উত্তর:- জোয়ারভাটা খেলে এমন একটি নদীর নাম হল টেমস্।

প্রশ্ন:- শৈবাল সাগর কি ?
উত্তর:- উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ভাসমান আগাছা ও শৈবালপূর্ণ বিস্তৃত স্রোতহীন জলভাগকে 'শৈবাল সাগর' বলে ।


সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ প্রশ্ন মান- ২ ও ৩

১. সমুদ্র স্রোত কাকে বলে?
উত্তরঃ পৃথিবীর আবর্তন, উষ্ণতা, বায়ু প্রবাহ, সমুদ্র জলের লবণের ঘনত্ব, এই সবের কারণে সমুদ্রের জলরাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করে। সমুদ্র জলের এই চলাচলের ঘটনাকে সমুদ্র স্রোত বলে। এই সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির পিছনে অনেক কারণ থাকে, যেমন - বায়ুপ্রবাহ, উষ্ণতা , জলের লবনের পরিমান, পৃথিবীর আবর্তন , মেরু অঞ্চলের বরফ, উপকূলের আকৃতি ইত্যাদি ।

২. মগ্নচরা বলতে কি বোঝ ?
উত্তরঃ উষ্ণ ও শীতল মিলন স্থলে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়। শীতল স্রোতের সাথে ভেসে আসা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়। ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা নুড়ি,বালি,পাথর প্রভৃতি সমুদ্র বক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে নিমগ্ন ভূমিভাগের সৃষ্টি করে একে মগ্নচড়া বলে।

যেমন - নিউজিল্যান্ডের উপকূলের অদূরে অবস্থিত ' গ্র‍্যান্ড ব্যাংক '।

মগ্নচড়া অঞ্চল অগভীর হবার জন্য এইসব স্থানে বিখ্যাত মৎস্যক্ষেত্র গড়ে উঠেছে 

৩. মহীসোপান কি ?
উত্তরঃ পৃথিবীর মহাদেশগুলোর চর্তুদিকে স্থলভাগের যে অংশ অল্প অল্প ঢালু হয়ে সমুদ্রের জলের  মধ্যে নেমে গেছে তাকে মহীসোপান বলে। আর মহীসোপানের শেষ সীমা থেকে ভূ-ভাগ খাড়াভাবে নেমে সমুদ্রের গভীরে তলদেশের সাথে মিশে যাওয়া অংশকে মহীঢাল বলে ।

৪. সমুদ্রস্রোতের চক্ৰগতি বা জায়র (Gyre) বলতে কী বােঝাে?

উত্তর : পৃথিবীর প্রধান তিনটি মহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের গতিপথ অনুসরণ করলে দেখা যায় যে সেগুলি চক্রাকারে ঘুরে জলাবর্ত সৃষ্টি করে। একে সমুদ্রস্রোতের চক্রগতি বা জায়র বলে। কোরিওলিস বলের প্রভাবে এটি হয়। এই চক্রগতিতে সমুদ্রস্রোত উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামাবর্তে ঘুরতে থাকে।

৫. হিমপ্রাচীর কাকে বলে ?
উত্তরঃ উত্তর আটল্যান্টিক মহাসাগরে সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত লাব্রাডর স্রোতের শীতল ও গাঢ় সবুজ রঙের জল এবং উপসাগরীয় স্রোতের উষ্ণ ও গাঢ় নীল জল বেশ কিছু দূর পর্যন্ত পাশাপাশি কিন্তু বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়েছে । এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতের মাঝে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা স্পষ্ট দেখা যায়, এই সীমারেখাকে হিমপ্রাচীর বলে । কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরে হিমপ্রাচীরের সীমারেখা বহুদূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায় । বিপরীতমুখী দুই সমুদ্রস্রোতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য এই অঞ্চলে প্রায়ই ঘন কুয়াশা ও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় ।

৬. সিজিকি কাকে বলে ?
৭. উষ্ণস্রোত কিভাবে উপকূলের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে ?
৮. জোয়ারভাটা সমান প্রবল হয় না কেন ?
৯. বহিঃস্রোত ও অন্তঃস্রোত কাকে বলে ?
১০. “সূর্যের আকর্ষণ চন্দ্রের আকর্ষণের তুলনায় বেশি শক্তিশালি হলেও” চন্দ্রের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ার হয়, এই মন্তব্যের জুক্তিকতা কোথায় ?
১১. বানডাকার কারণগুলি কি কি ?
১২.মগ্নচরা অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
১২. পার্থক্য লেখঃ ক. সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্রতরঙ্গ খ. উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত গ. অন্ত স্রোত ও বহি স্রোত ঘ. মুখ্য ও গৌণ জোয়ার ঙ. ভরা ও মরা কোটাল চ. অ্যাপজি ও পেরিজি

রচনাধর্মী উত্তরঃ প্রশ্ন মান – ৫

১. জোয়ারসৃষ্টির মুখ্য কারণগুলি কি কি ? 

Ans:☼ জোয়ারভাটা [Tides]:- মুখ্যত চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে এবং অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায় সূর্যের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে নিয়মিতভাবে দিনে দু’বার করে পর্যায়ক্রমে সমুদ্রের জল এক জায়গায় ফুলে ওঠে, আবার এক জায়গায় নেমে যায় । চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রের জলরাশির এই নিয়মিত ফুলে ওঠা বা জলস্ফীতিকে জোয়ার [High Tide] এবং সমুদ্রের জলরাশির এই নিয়মিত নেমে যাওয়া বা সমুদ্রজলের অবনমনকে ভাটা [Low Tide] বলে । সমুদ্রের জল ফুলে ওঠার ফলে সেই জল উপকূলের কাছাকাছি নদনদীতে ঢুকে পড়ে । সেইজন্য উপকূলের কাছাকাছি নদনদীতে জোয়ারভাটার খেলা দেখা যায় । স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা অগভীর সমুদ্রে জোয়ারভাটার সময় জলতলের পার্থক্য মাত্র ১ মিটারেরও কম হয় ।

☼ জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ:- ভূপৃষ্ঠে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির প্রধান কারণ হল:- (১) চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ ও (২) পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন বিকর্ষণী শক্তি ।

(১) চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ:- পৃথিবীতে সমস্ত বস্তুই পরস্পরকে আকর্ষণ করে । এই আকর্ষণের নাম মহাকর্ষণ । মহাকর্ষণের ফলে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে এবং চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে বেড়ায় । আবার এই মহাকর্ষণের পরিমাণ সব জায়গায় সমান নয় । যে বস্তু যত বড় তার আকর্ষণ ক্ষমতা তত বেশি । কিন্তু দূরত্ব বাড়লে আকর্ষণের কার্যকরী ক্ষমতা বহু গুণে কমে যায় । সূর্য এবং চন্দ্র উভয়েই পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে । সূর্য চন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি বড় হলেও সূর্যের তুলনায় চন্দ্র পৃথিবীর কাছে আছে বলে জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সূর্যের আকর্ষণের তুলনায় চন্দ্রের আকর্ষণই বেশি কার্যকরী হয় । সূর্যের ভর চন্দ্রের ভরের তুলনায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও সূর্য চন্দ্রের প্রায় ৩৮০ গুণ দূরে অবস্থিত । এইজন্য পৃথিবীর জলভাগের ওপর চন্দ্রের আকর্ষণী ক্ষমতা সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সূর্যের চেয়ে প্রধানত চন্দ্রের আকর্ষণেই জোয়ারভাটা হয় । চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে কঠিন পদার্থের তুলনায় পৃথিবীর তরল জলরাশি খুবভ সহজে প্রবাহিত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে । পৃথিবীর জলরাশির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায়, চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ প্রভাবিত স্থানের দিকে পৃথিবীর জলরাশি চলে যাওয়ায় কম আকর্ষণযুক্ত স্থানে ভাটার সৃষ্টি হয় ।

(২) পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন বিকর্ষণী শক্তি:- পৃথিবীর আবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের সব জিনিস বাইরে ছিটকে চলে যেতে চায় । এর নাম বিকর্ষণ শক্তি । ভূপৃষ্ঠের জলরাশির উপর এই বিকর্ষণ শক্তির প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন বিকর্ষণী শক্তি ভূপৃষ্ঠে জোয়ারভাটা সৃষ্টির অন্যতম কারণ ।

২. জোয়ারভাটার সুফল ও কুফল গুলি আলোচনা করো ? 

Ans:☼ জোয়ার ভাটার ফলাফল [Impact of Tides]:- সমুদ্র উপকূলে ও উপকুলের কাছে নদনদীতে জোয়ার ভাটার প্রভাব বেশি । জোয়ার ভাটার নিম্নলিখিত ফলাফল গুলি :-

• জোয়ারভাটার সুফল:

১) জোয়ারের ফলে নদীর জল নির্মল থাকে  ।

২) জোয়ার ভাটার ফলে নদী থেকে আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে । ফলে ভাটার টানে নদী আবর্জনা ও পলিমুক্ত হয়  ।

৩) জোয়ারের জলের টানে নদী-মোহনায় সঞ্চিত পলিমাটি সমুদ্রের দিকে চলে যায় ও নদী মোহনা পলিমুক্ত হয় এবং বদ্বীপ গঠনে বাধা পড়ে ।

৪) জোয়ারের জল নদী-খাতে ঢুকে এর বিস্তার ও গভীরতা বৃদ্ধি করে, ফলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ দেশের অভ্যন্তরে নদী-বন্দরে ঢুকতে পারে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয় । যেমন জোয়ারের সময় হুগলী নদীর মধ্য দিয়ে বড় বড় জাহাজ কলকাতা বন্দরে আসে ।

৫) আজকাল উন্নত দেশগুলিতে জোয়ারের জলকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় ।

• জোয়ারের কুফল:

১) জোয়ারের জল অনেক সময় নদী মোহনার পলি তুলে নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নদীগর্ভে জমা করে নদীর গভীরতা কমিয়ে ফেলে  ।

২) জোয়ারের ফলে নদীর মিষ্টি জল লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় তা খাওয়া ও সেচের কাজে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে ।

৩) প্রবল জোয়ারের ফলে নদীতে যে জলস্ফীতি ঘটে তার ফলে অনেক সময় নদী তীরের চাষ-আবাদ ও বাড়ি-ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয় ।

৪) প্রবল জোয়ারের ফলে নদীতে বান আসলে তার ফলে নৌকাডুবি এবং জীবন হানির সম্ভাবনা থাকে ।

৩. বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্মের প্রধান কারণগুলি ব্যাখা করো ?
৪. সমুদ্র স্রোত সৃষ্টির কারণগুলি আলোচনা করো ?
উত্তরঃ সমুদ্রস্রোতের উত্পত্তির কারণ :

(১) নিয়ত বায়ূপ্রবাহ [Planetary or Permanent Wind]:- নিয়ত বায়ুপ্রবাহ হল সমুদ্র স্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্র স্রোতকেও নিজের গতিপথের দিকে টেনে নিয়ে যায়, যেমন: (i) যেসব স্থানে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে নিরক্ষরেখার দিকে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, (ii) যেসব স্থানে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, আবার (iii) মেরুবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয় ।


(২) পৃথিবীর আবর্তন গতি:- নিজের আবর্তন গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অবিরাম ঘুরে চলেছে । পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য ফেরেলের সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রস্রোতেরও গতিবিক্ষেপ ঘটে এবং সমুদ্র স্রোত সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হতে পারে না । পৃথিবীর আবর্তনের জন্য সমুদ্র স্রোতের গতি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে বেঁকে যায় ।

(৩) সমুদ্রের জলের ঊষ্ণতার তারতম্য:- সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠের কোথাও লম্বভাবে, আবার কোথাও তির্যকভাবে পড়ে । সূর্যরশ্মির পতন কোণের এই পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সমুদ্রের জলের উষ্ণতার মধ্যেও যথেষ্ঠ পার্থক্য লক্ষ করা যায় । উষ্ণতার সমতা বজায় রাখার জন্য তুলনামূলক ভাবে উষ্ণ অঞ্চলের জলরাশি শীতল অঞ্চলের দিকে এবং শীতল অঞ্চলের জলরাশি উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রজল সূর্য কিরণে উত্তপ্ত এবং আয়তনে বর্ধিত ও হালকা হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঁচু হয়ে ভেসে ওঠে এবং বহিঃস্রোত [Hot Surface Current] বা উষ্ণ-পৃষ্ঠ স্রোত হিসেবে শীতল মেরু প্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল এবং ভারী জল সমুদ্রের নীচ দিয়ে শীতল অন্তঃস্রোত [Cold Under Current] হিসেবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এই ভাবে উষ্ণ ও শীতল অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় ।

(৪) বাষ্পীভবন :- উষ্ণতার জন্য সমুদ্রের কোনো অংশে বাষ্পীভবন বেশি হলে সেখানে জলের অভাব পূরণ করার জন্য চারদিক থেকে শীতল স্রোত ছুটে আসে, ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় ।


(৫) সমুদ্রজলের লবণত্ব ও ঘনত্বের তারতম্য :- সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয় । সমুদ্র জলের লবণত্ব ও ঘনত্বের তারতম্যের জন্যেও সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি হয় । লবণাক্ততার সমতা আনার জন্য সমুদ্রের কম লবণাক্ত হালকা জল সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে বেশি লবণাক্ত ভারী জলের দিকে বহিঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয় । আবার সমুদ্রের বেশি লবণাক্ত ভারী জল কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে অন্তঃস্রোত হিসাবে প্রবাহিত হয় । এইভাবে মেরু অঞ্চলের বেশি লবণাক্ত জল নিরক্ষীয় অঞ্চলের কম লবণাক্ত জলের দিকে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি করে । আবার শীতল ও বেশি লবণাক্ত জল উষ্ণ ও কম লবণাক্ত জলের চেয়ে ভারী হওয়ায় বেশি লবণাক্ত ভারী জল নীচে নামে এবং কম লবণাক্ত হালকা জল ওপরে ওঠে । এইভাবে ওপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে ওপরে স্রোতের সৃষ্টি হয় ।

৫) সমুদ্রোপকূলের ভূমিভাগের আকৃতি : বিভিন্ন মহাদেশ বা স্থলভাগের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের । এর ফলে বিভিন্ন মহাদেশের উপকূলভাগ বা দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়ে সমুদ্র স্রোতের গতি পরিবর্তিত হয় ।

৬) বিভিন্ন সমুদ্র স্রোতের মিলনস্থলে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি:- বিভিন্ন সমুদ্র স্রোতের মিলনস্থলে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় । তবে এই ধরনের সমুদ্র স্রোতের ব্যাপকতা থাকে না এবং সাধারণত এগুলো সাময়িক স্রোত হিসেবেও পরিগণিত হয় ।


৫. পৃথিবীব্যাপি সমুদ্রস্রোতের প্রভাব গুলি আলোচনা করো ?

Ans:☼ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব [Impact of Ocean Current]:- ভৌগলিক পরিবেশ ও মানুষের কাজকর্মের ওপর সমুদ্রস্রোতের নানা রকম প্রভাব দেখা যায় :-

(১) শীতল স্রোত উপকূলের জলবায়ুকে অপেক্ষাকৃত শীতল রাখে । উষ্ণ স্রোত উপকূলের জলবায়ুকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ রাখে ।  যেমন: শীতল স্রোতের প্রভাবে নিউইয়র্কের জলবায়ু অপেক্ষাকৃত শীতল হয় । আর উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ে এবং উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের প্রচন্ড ঠান্ডা হ্রাস পায় । 

(২) উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শীতল প্রদেশে এলে সেখানে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।

(৩) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে কুয়াশা ও ঝড় হয় ।  যেমন : উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ু পরস্পর সংমিশ্রণের ফলে এই অঞ্চলে প্রবল ঝড় ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় । এইজন্য এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল বিপজ্জনক ।

(৪) উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে শীতপ্রধান দেশের বন্দর ও পোতাশ্রয় বরফ মুক্ত থাকে ।

(৫)  স্রোতের মুখে জাহাজ চালানো সুবিধাজনক ।

(৬) উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে এবং মগ্ন চড়ার কাছে সমুদ্রে প্ল্যাঙ্কটন ও মাছের অন্যান্য খাদ্য বেশি পাওয়া যায় । ফলে সামুদ্রিক মাছের ঝাঁক উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে বাস করে । এইজন্য নিউফাউন্ডল্যান্ড, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, নরওয়ে ও জাপানের উপকূলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মত্সচারণ ক্ষেত্রগুলি গড়ে উঠেছে ।