সঠিক উত্তরটি নির্বাচন কর
উত্তরঃ (ঘ) বাংলা প্রদেশে
১.২) চৌরিচৌরার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন আন্দোলন প্রত্যাহার করার চেষ্টা করা হয় -
(ক) স্বদেশী আন্দোলন (খ) অহিংস আন্দোলন (গ) আইন অমান্য আন্দোলন (ঘ)ভারত ছাড়ো আন্দোলন
উত্তরঃ (খ) অহিংস আন্দোলন
১.৩) হুদা ই খিদমতগার তৈরি করেন -
(ক)বাবা রাম চন্দ্র (খ) গান্ধীজি (গ)মৌলানা ভাসানী (ঘ) খান আব্দুল গহর খান
উত্তরঃ (ঘ) খান আব্দুল গহর খান
১.৪) নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস স্থাপিত হয় -
(ক) ১৯২০খ্রিঃ (খ) ১৯২২খ্রিঃ (গ) ১৯২৫ খ্রিঃ (ঘ) ১৯২৮ খ্রিঃ
উত্তরঃ (ক) ১৯২০খ্রিঃ
১.৫) দেশপ্রান আখ্যা দেয়া হয়েছিল - (ক)সুভাষচন্দ্র বসুকে (খ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে (গ) চিত্তরঞ্জন দাশ (ঘ) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী
উত্তরঃ (খ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে
১.৬) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ বিদ্রোহ হয়েছিল - (ক)মাদ্রাজে (খ) মুম্বাইতে (গ) কলকাতায় (ঘ) দিল্লিতে
উত্তরঃ (খ) মুম্বাইতে
১.৭) বারদৌলি সত্যাগ্রহ সময় 'সর্দার' উপাধি পান -
(ক) রাজেন্দ্র প্রসাদ (খ) কল্যাণজি মেহত (গ) বল্লভ ভাই প্যাটেল (খ)গান্ধীজি
উত্তরঃ (গ) বল্লভ ভাই প্যাটেল
১.৮) কে সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন -
(ক) নেতাজি (খ) জিন্না (গ) নেহেরু (ঘ) গান্ধীজি
উত্তরঃ (ঘ) গান্ধীজি
১.৯) মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার একজন অভিযুক্ত ছিলেন
(ক) ফিলিপ স্প্র্যাট (খ) ভগৎ সিং (গ) ক্ষুদিরাম বসু (ঘ) রাসবিহারী বসু
উত্তরঃ (ক) ফিলিপ স্প্র্যাট
১.১০) স্বরাজ্য দল এর সভাপতি ছিলেন -
(ক) গান্ধীজি (খ) চিত্তরঞ্জন দাশ (গ) নেতাজি (ঘ) মতিলাল নেহেরু
উত্তরঃ (খ) চিত্তরঞ্জন দাশ
গুরুত্বপূর্ন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী
1.রাউলাট সত্যাগ্রহের প্রধান কেন্দ্র কোথায় ছিল ?
উত্তর : বোম্বাই ।
2.স্বদেশ বান্ধব সমিতি কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তর : বরিশাল ।
3.অনুশীলন সমিতি কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর : ঢাকায় ।
4.বঙ্গভঙ্গ কবে ঘোষিত হয় ?
উত্তর : 1905 খ্রিষ্টাব্দে 16 ই অক্টোবর ।
5.লর্ড কার্জন কবে বাংলা দ্বিখন্ডিত করেন ?
উত্তর : 1905 খ্রিস্টাব্দ ।
6.স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন কবে শুরু হয় ?
উত্তর :1905 খ্রিষ্টাব্দ ।
7.1920 সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনের সভাপতিত্ব কে করেন ?
উত্তর : লালা লাজপৎ রায় ।
8.অসহযোগ আন্দোলনে বীরভূমের কৃষক আন্দোলনের প্রধান নেতা কে ছিলেন ?
উত্তর : জীতেন্দ্রলাল বন্দোপাধ্যায় ।
9.মদনমোহন মালব্যেয়ের উদ্যোগে কবে কিষান সভা গঠিত হয় ?
উত্তর : 1917 সালে ।
10.চৌরিচৌরার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন আন্দোলন প্রত্যাহার করার চেষ্টা করা হয় ?
উত্তর : অহিংস আন্দোলন ।
11.বাবা গরিবদাস ও মাদারীপাশা কোন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন ?
উত্তর : একা আন্দোলন ।
12.পতিদার যুবক মণ্ডল কোথায় গড়ে ওঠে ?
উত্তর : বারদৌলিতে ।
13.হালি প্রথা কোথায় প্রচলিত হয় ?
উত্তর : বারদৌলিতে ।
14 . কালিপরাজ নামে কৃষকরা কোথায় বসবাস করত ?
উত্তর : বারদৌলিতে ।
15.বারদৌলি সত্যাগ্রহ কবে অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তর : 1930 সালে ।
16.আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কেরালার কৃষক আন্দোলনে কোন কংগ্রেস নেতা নেতৃত্ব দেন ?
উত্তর : কেলাপ্পান ।
17.সর্বভারতীয় কৃষান সভার প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর : স্বামী সহজানন্দ ।
18.সর্বভারতীয় কৃষাণ সভার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তর : এন জি রঙ্গ ।
19.নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কবে স্থাপিত হয় ?
উত্তর : 1920 সালে ।
20.গিরনি কামগার ইউনিয়ন কবে স্থাপিত হয় ?
উত্তর : 1928 সালে ।
21.এ আই ইউ সি এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ? উত্তর : লালা লাজপৎ রায় । 22.ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টি অব বেঙ্গাল এর সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর : নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত ।
23.1946 সালের নৌ বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল ?
উত্তর : বোম্বাই তে ।
24.কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর : 1934 সালে ।
‘লাঙল ‘ পত্রিকার সম্পাদনা কে করেন ?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ।
26.’গণবাণী ‘পত্রিকাটির সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তর : মুজফফর আহমেদ ।
27.যুব কমরেড লীগ কার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ?
উত্তর : পি সি জোশির ।
28. মি. মার্টিন কার ছদ্মনাম ?
উত্তর : মানবেন্দ্রনাথ রায় ।
29.কে সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর : গান্ধিজি ।
30. স্বরাজ্য দলের সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর : চিত্তরঞ্জন দাশ ।
31.ভারতের প্রথম শ্রমিক সংগঠনটির নাম কি ?
উত্তর : শ্রমজীবী সমিতি ।
32. তেভাগা আন্দোলনের একজন নেত্রীর নাম লেখ ?
উত্তর : সুদীপা সেন ।
33.তেলেঙ্গানা আন্দোলন কোথায় হয়েছিল ?
উত্তর : হায়দ্রাবাদে ।
34.ভারতের বামপন্থী আন্দোলনের জনক কে ছিলেন ?
উত্তর : মানবেন্দ্রনাথ রায় ।
35. ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়নের নাম কি ?
উত্তর : মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন ।
36 . লেবার স্বরাজ পার্টির নাম পরিবর্তন করে কি রাখা হয় ?
উত্তর : ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টি ।
37 .বোম্বাইয়ের দ্যা মেনস ক্লাব কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর : 1895 সালে ।
38. লীগ অব রাডিক্যাল কংগ্রেস মেন কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর : মানবেন্দ্রনাথ রায় ।
39.সারা ভারত কৃষাণ কংগ্রেসের সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর : এন জি রঙ্গ ।
40. ভারতে প্রকাশিত প্রথম কমিউনিস্ট পত্রিকাটির নাম কি ?
উত্তর : সোশ্যালিস্ট পত্রিকা ।
41.সন্তোষকুমারী গুপ্তা সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম কি ?
উত্তর : শ্রমিক ।
42.কীর্তি পত্রিকাটির সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তর : সন্তোষ সিং ।
43. ইনকিলাব পত্রিকাটির সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তর : গোলাম হোসেন ।
44.মহাত্মা গান্ধীর প্রকৃত নাম কি ?
উত্তর : মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ।
45. কংগ্রেস কবে প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করে ?
উত্তর : 1930 সালের 26 শে জানুয়ারি ।
46.করেংগে ইয়া মরেংগে কার উক্তি ?
উত্তর : মহাত্মা গান্ধীজির ।
47.মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কবে শুরু হয় ?
উত্তর : 1929 সালে ।
48.কে কবে বাংলা কে দ্বীখণ্ডিত করেন ?
উত্তর : বড়োলাট লর্ড কার্জন 1905 সালের 16 ই অক্টোবর ।
49.কার্জনের বঙ্গ ভঙ্গের প্রতিবাদে কোন আন্দোলন শুরু হয় ?
উত্তর : স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন ।
50.ভারতে প্রথম কবে মে দিবস পালিত হয় ?
উত্তর : 1927 সালের 1 লা মে বোম্বাইতে ।
51.কে অন্ধ্রপ্রদেশে রায়ত সভা প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর : এন জি রঙ্গ 1933_34 সালে ।
52 . কে ভারতীয় বিপ্লবী কমিটি গঠন করেন ?
উত্তর : মানবেন্দ্রনাথ রায়
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নঃ প্রশ্নমান- ২
২. কানপুর বলশেভিক মামলায় কারা অভিযুক্ত ছিলেন ?
৩. বিশের দশকে বোম্বাইয়ে দুটি শ্রমিক সংগঠনের নাম লেখ ?
৪. নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
৫. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কি ? এর পতিক্রিয়া কি ছিল ?
রচনাধর্মী প্রশ্নঃ প্রশ্নমান – ৪
২. একা আন্দলনে কৃষকদের ভুমিকা আলোচনা করো ?
৩. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কেন হয়েছিল ?
৪. ভারত ছাড়ো আন্দলনে কৃষকদের ভুমিকা আলোচনা করো ?
৫. তেভাগা আন্দোলন কেন সংগঠিত হয় ?
৬. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রি দল কেন ও কাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়?
ব্যাখ্যামুলক প্রশ্নঃ প্রশ্নমান- ৮
২. ১৯২০ সালের পর শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার ঘটেছিল ?
৩. বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলোচনা করো ?
4.ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ কেমন ছিল? ওয়ার্কার্স এন্ড প্রেজেন্ট পার্টির কার্যকলাপ কেমন ছিল?
ভূমিকাঃ- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনই ছিল ভারতের শেষ গণ আন্দোলন। এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণিও যুক্ত হয়।
শ্রমিক আন্দোলনঃ- জাতীয় নেতারা গ্রেফতার হলে (8 আগস্ট, 1942) কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা 12 দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন (9 আগস্ট, 1942)। এই কর্মসূচিতে শিল্প ধর্মঘট, রেলপথ ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ করা, খাজনা বন্ধ ও সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়।
বোম্বাইঃ- এখানে 9-14 আগস্ট গণবিক্ষোভ ঘটে। শিল্পাঞ্চল ও বন্দর এলাকায় ধর্মঘট হয়। সরকারি প্রশাসন লোপ পায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার পুলিশ ও সেনা তলব করে।
গুজরাটঃ- মজদুর মহাজন সংঘের পরিচালনায় আহমেদাবাদ বস্ত্রশিল্পে 1,25,000 শ্রমিক ধর্মঘট করে। এখানকার শ্রমিকেরা আজাদ। সরকার নামে একটি সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলে।
বিহারঃ- টাটা লৌহ-ইস্পাত কারখানার (TISCO) শ্রমিকেরা 10 আগস্ট থেকে টানা 13 দিন ধর্মঘট করে। তারা দাবি জানায়, জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবে না। 12 আগস্ট ডালমিয়ানগরে শ্রমিক ধর্মঘট হয়।
মহীশূরঃ- ব্যাঙ্গালোর শিল্পাঞ্চল ও বিভিন্ন খনি অঞলে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ গুলি চালায়।
অন্যান্য রাজ্যঃ- এগুলি ছাড়াও দিল্লি, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, মাদ্রাজ, টেনালি, রামনাদ, কোয়েম্বাটোর ও কলকাতাতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। এভাবে শ্রমিকশ্রেণি জাতীয় আন্দোলনের অংশীদার হয়ে ওঠে।
ওয়ার্কার্স এন্ড প্রেজেন্ট পার্টির কার্যকলাপ
ভূমকাঃ-কংগ্রেস দল শ্রমিক ও কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশ-বি্রোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার যে উদ্যোগ নেয় সেক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি।
পেজেন্টস পার্টির বাংলা শাখাঃ- কাজি নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, সামসুদ্দিন হ্রসেন প্রমুখের উদ্যোগে 1925 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কংগ্রেস দলের মধ্যে ‘লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামে একটি দল প্রতিষ্ঠিত হয়। 1926 খ্রিস্টাব্দে এই দলের নাম হল ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি অব বেঙ্গল। পেজেন্টস পার্টির সর্বভারতীয় শাখা; বাংলার অনুকরণে বিভিন্ন প্রদেশে শীঘ্রই এই পার্টির শাখা গড়ে ওঠে। এই শাখাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে 1928 খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক হন আর এস নিম্বকার।
উদ্দেশ্যঃ- ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল—
a. শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা কমানো
b. সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ
c. জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ প্রভৃতি
কার্যকলাপঃ- এই দল শ্রমিকদের মধ্যে প্রচার করতে থাকে যে, শ্রমিকরা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাধীনতা না পেলে রাজনৈতিক দিক থেকে স্বাধীনতার কোনো মূল্যই থাকবে না। পেজেন্টস পার্টির নেতারা রাজনৈতিক আন্দোলন ও শ্রেণি সংগ্রাম সম্পর্কে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে থাকেন। শ্রমজীবীরা বুঝতে পারে তারা আলাদা একটা সামাজিক শ্রেণি। তাদের মধ্যে এক ঐক্যভাব গড়ে ওঠে। শোষকশ্রেণিকে তারা চিনতে পারে। নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য তারা যৌথভাবে আলোচনা শুরু করে। শিল্পাঞ্চলে ক্রমশ তারা সংগঠিত হয়ে ওঠে।
মুখপত্রঃ- বিভিন্ন প্রদেশে এই পার্টির মুখপত্র প্রকাশের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চলতে থাকে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘লাঙল’, ‘গণবাণী’, ‘শ্রমিক’, ‘সোশ্যালিস্ট’ ‘কীর্তি', ‘লেবার-কিষাণ-গেজেট’ প্রভৃতি।
আন্দোলনঃ- এই দলের পরিচালনায় বোম্বাইয়ে রেল, ছাপাখানা, পৌরসভা, বন্দর প্রভৃতির শ্রমিকরা শক্তিশালী সরকার-বিরোধী আন্দোলন করে।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলাঃ- এই দলের আন্দোলনে আতঙ্কিত হয়ে সরকার এই দলের বহু নেতাকে গ্রেফতার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় (1929 খ্রি.) অভিযুক্ত করলে তাদের আন্দোলনের গতি দুর্বল হয়ে যায়।
মূল্যায়নঃ- ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে ভারতের শ্রমজীবীদের মুক্তি আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সংগঠন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করলেও এই সংগঠন ছিল শহরকেন্দ্রিক, তাই শহরের শিল্পশ্রমিকেরা এর আওতায় এসেছিল। গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে তারা নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে না পারায় কৃষকেরা সংগঠিত হতে পারেনি। কিন্তু এই সংগঠনের হাত ধরেই কমিউনিস্ট পার্টি তার সংগঠন বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়।
5.আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক শ্রেণীর ভূমিকা আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ- অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহমাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গান্ধিজিসহ কংগ্রেসের প্রথম সারির সকল নেতারা এই কৃষক বিদ্রোহগুলিকে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। ওই সময় যেসব অঞ্চলে আন্দোলনগুলি সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলি হল—
এলাহাবাদের প্রতাপগড়ঃ- 1920 খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদের প্রতাপগড় গ্রামের কৃষকরা তাদের শোচনীয় অবস্থা ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরেন। তারপর কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ওই অঞ্চলে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে।
উট অল্ট, মালাবারঃ- 1921-22 খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের সময় অন্ত্র, মালাবার ও বাংলায় কৃষক বিদ্রোহ গণমুখী হয়ে ওঠে। ওই সময় অন্ত্রপ্রদেশের কৃষকদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও একত্রে সরকারের খাজনা প্রদান বন্ধ করেন। এর ফলে সরকারি প্রশাসন প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
মালাবারের কৃষক বিদ্রোহঃ- অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে মালাবারের মোপলা কৃষকরা জমিদারদের শোষণ ও প্রবর্তিত প্রজাস্বত্ব আইন বাস্তবে প্রচলিত না হওয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। 1920 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের জেলা অধিবেশন থেকেই মোপলাদের কৃষক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। সরকার কঠোর হাতে এই আন্দোলন দমন, করে। এতে প্রচুর কৃষক প্রাণ হারায় ও তাদের জমি-জায়গা বাজেয়াপ্ত হয়। যুক্তপ্রদেশের কৃষক আন্দোলন ও যুক্তপ্রদেশের কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা আসে হোমরুল, খিলাফৎ ও অসহযোগ আন্দোলন থেকে। 1921 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কৃষক বিদ্রোহের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের চরিত্রগত তফাত দেখা যায়নি। সরকারি দমনপীড়নের কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হয়। মাদ্রাজ ও পাঞ্জাবের আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের অবসানের পরও মাদ্রাজ ও পাঞ্জাবের শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। 1928 খ্রিস্টাব্দে ‘সর্বভারতীয় কিযান সভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এই কৃষক সভা কৃষক আন্দোলনে তেমন সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি।
উপসংহারঃ- পরিশেষে বলা যায় যে, অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষকশ্রেণি যেভাবে আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়েছিল তা তাৎপর্যপূর্ণ। এ ছাড়া অন্যান্য কৃষক আন্দোলনের মতো বারদৌলি সত্যাগ্রহও ছিল গুরুত্বপূর্ণ কৃষক আন্দোলন।